সাহিত্যে পরিবেশের প্রভাব

 সুশীল বন্দ্যোপাধ্যায়

 

কথায় আছে,'যশ্মিন দেশে যদাচার',মানুষ যে পরিবেশে বাস করে তার প্রভাব মানুষের উপরে-তার কাজে কর্মে,চিন্তা ভাবনার উপর পড়বেই, এটাই স্বাভাবিক।আর মানুষই যেহেতু সাহিত্য সৃষ্টি করেছে তাই এই সাহিত্যের উপরেও পরিবেশের প্রভাব পড়তেই হয়,কারণ সাহিত্য হলো মানুষেরই চিন্তাভাবনার ফসল।আমরা শুনে এসেছি যে সাহিত্যের সাথে 'সহিত' কথাটির সম্পর্ক আছে।মানুষের মন যে কল্পনার ডানা মেলে তখনও কিন্তু তার পা মাটির উপরই থাকে এবং যেগুলি কল্পনা করে তার উপাদান

 

পরিবেশ থেকেই সংগ্ৰহ করে।হয়তো তার উপর অতিরঞ্জন হয়,অতিবাস্তবতার ছোঁয়া দিতে হয় কিন্তু মূলটা আসে বাস্তব থেকেই।যেমন প্রথমে ঘোড়ায় চড়তেই হয় তারপর না হয় সেই ঘোড়ার পাখা গজিয়ে রূপকথার রাজ্যে পাড়ি দেয়।বঙ্কিমচন্দ্র, সঞ্জীবচন্দ্র,রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর,বিভুতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়,বুদ্ধদেব গুহ,জসীমউদ্দীন, জীবনানন্দ দাশ প্রভৃতির রচনায় যেমন আমরা সরাসরি প্রকৃতির অপূর্ব বর্ণনা পাই তেমনি ভারতবর্ষে বিদেশী উপনিবেশ গড়ে উঠেছিল বলেই আনন্দমঠ,পথের দাবীর মতো উপন্যাস পেয়েছি,ধর্মীয় সংকট উৎপন্ন হয়েছিলো বলে "গোরা"র মতো উপন্যাস পেয়েছি এবং জমিদারি অত্যাচার হয়েছিলো বলে 'গনদেবতা' পেয়েছি।অতএব  সাহিত্যের উপর পরিবেশের প্রভাব থাকছেই।

 

 

সর্ব বৃহৎ কাব্যসৃষ্টি মহাকাব্যের কথাই যদি ধরা যায় তো মহাকাব্যের উল্লেখযোগ্য অনেক গুলি

 

বৈশিষ্ট্য বা গুনাবলীর মধ্যে একটি হলো,তার বিষয়বস্ত,  ইতিহাস বা কোন সত্যঘটনার উপর নির্ভর করে  যাকে গড়ে উঠতে হয়,তার ঘটনাকাল প্রলম্বিত হয়,ফলে একদিকে যেমন মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষা,প্রেম ভালোবাসা, যুদ্ধবিগ্ৰহ,কলহ বিবাদ,হর্ষ-বিষাদ প্রভৃতি মানবিক অনুভূতি গুলি একে একে ঘটনাক্রমে চলে আসে  অন্যদিকে জল, বায়ু,পাহাড় পর্বত, নদী,আকাশ,চন্দ্রসূর্য,মাটি,পাথর, গাছ,কীটপতঙ্গ প্রভৃতি পৃথিবীর উপাদান গুলিও কোন না কোন ভাবে মহাকাব্যের বিস্তারে মিশে যায়।এভাবেই প্রাকৃতিক, সামাজিক বা সাংস্কৃতিক বিষয়গুলি সাহিত্যের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে যায়।আর আমরা জানি যে আমাদের চারপাশের জৈব বা অজৈব পার্থিব উপাদানগুলি কিম্বা মানুষের তৈরি সামাজিক বা সাংস্কৃতিক বিষয়গুলি যা আমাদের জীবনে চলার পথে কোন না কোন ভাবে প্রভাবিত করে তাই হলো পরিবেশ।মহাভারত ও রামায়ণ এই বিশাল দুটি মহাকাব্যের ভেতরের যুদ্ধবিগ্ৰহ, অসংখ্য  ঘটনার উত্থান পতন,মানসিক

 

টানাপোড়েনের কথা আমরা জানি।গ্ৰন্থদুটির তথাকথিত অনৈতিহাসিক বা অলৌকিক অংশগুলিকে বাদ দিলেও বাকি ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে যেন আমাদের সামাজের ঘটনাগুলিরই প্রতিফলন ঘটেছে।মহাভারতের দ্রৌপদী ও রামায়ণের সীতার বিলাপগাথা যেন আমাদের সাধারণ মধ্যবিত্ত গৃহস্থ নারীর সমস্যাগুলিরই  প্রতিফলন।হোমারের ইলিয়াড ও ওডিসিতে স্পাটা ও ট্রয় এই দুই গ্ৰীক রাজ্যের মধ্যে বিশ্ব সুন্দরী মেনেলাসের পত্নী হেলেন কে অপহরণ নিয়ে যে বিবাদ তা শেষ পর্যন্ত যুদ্ধে পরিণতি পায় ।সেখানেও সামাজিক তথা ভৌগলিক পরিবেশেই প্রস্ফুটিত হয়েছে।

 

 

'বসুধৈব কুটুম্বকম'- এই ছোট্ট রচনাটির মধ্যে সমগ্ৰ বিশ্বপরিবেশ একীভুত হয়ে আছে।আমাদের আদিগ্ৰন্থ বেদ হলো ভারতীয় ঐতিহ্যের সারসংক্ষেপ।ভারতের ইতিহাস বলে, আর্যরা ছিলেন প্রকৃতির উপাসক।তাঁরা মূর্তি পূজায় বিশ্বাসী ছিলেন না,প্রকৃতিই  ছিল ত়াঁদের

 

দেবতা,যেমন,জল,আগুন,বাতাস,সূর্য, চন্দ্র ইত্যাদি।তাঁরা জানতেন প্রকৃতিই ভবিষ্যতে  মানুষকে বাঁচিয়ে রাখতে সাহায্য করবে,তাই মানুষ যাতে তার রক্ষনাবেক্ষন করে  তাই এই ব্যবস্থা।তাছাড়া প্রকৃতির উপর ছিলো  তাদের গভীর আন্তরিক  শ্রদ্ধা।সুতরাং বেদ রচনায় এই প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রভাব ছিল অবশ্যম্ভাবী।বেদগুলিতে পাহাড়,পর্বত, নদী,জঙ্গল,জনপদ,বৃষ্টি,শস্য, গাছ ইত্যাদির কথা যেমন আছে, সর্বশেষ বেদ 'অথর্ব বেদ'এর বিভিন্ন অধ্যায় জুড়ে আছে মানুষের  বিবাহ,বিবাহিত জীবন,মা বাবার সন্তানের প্রতি শিক্ষাদান,পারলৌকিক ক্রিয়া,দৈহিক অনুশীলন, সুখ,দূঃখ,আতিথেয়তা,আত্মরক্ষা,দর্শন, রাজ্যশাসন ইত্যাদির পূর্বাপর বর্ণনা যা কিনা মানুষের তৈরি সামাজিক তথা সাংস্কৃতিক পরিবেশকেই ঈঙ্গিত করে।

 

 

বৌদ্ধধর্মগ্ৰন্থ 'ত্রিপিটক'এ বৌদ্ধবিহারগুলিতে

 

বৌদ্ধভিক্ষুদের জীবনযাপন পদ্ধতি, তার নিয়মশৃঙ্খলা বর্ণিত আছে।বৌদ্ধধর্মে প্রকৃতি ও জীবজন্তুর সাথে মানুষের সহাবস্থানের কথা বলা আছে।ইতিহাসের পাতায় বুদ্ধদেবের ধ্যানমূর্তির চারপাশে নানারকম জীবজন্তুদের ছবিটি মনে করলেই তা বোঝা যায়।বলা বাহুল্য বর্তমানে আমরা ইকোলজিকেল ব্যালান্সের গুরুত্ব আলোচনা করে থাকি।।এছাড়া ভগবান বুদ্ধকে সুজাতার  পায়েসান্ন প্রদানের ঘটনাটি এক উজ্জ্বল সামাজিকতার দৃষ্টান্ত।প্রাচীনতম বাংলা গ্ৰন্থ 'চর্যাপদ'এ অষ্টম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর বৌদ্ধ্য সহজিয়া সমাজ জীবনের কথা লিপিবদ্ধ আছে। 

 

মহাকবি কালিদাসকে তো 'প্রকৃতির কবি' বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে।তাঁর শ্রেষ্ঠ কাব্য 'মেঘদুতম্' এর দ্বিতীয় শ্লোকের শেষ দুটি লাইন পড়লেই তা বোঝা যায়-

 

 

আষাঢ়স্য প্রথমদিবসে মেঘমাশ্লিষ্টসানুঃ

 

 

বপ্রক্রীড়াপরিণতগজপ্রেক্ষণীয়ং দদর্শ।

 

 

আষাঢ় মাসের প্রথমদিনে যক্ষ দেখলেন কিভাবে মেঘ আবির্ভূত হয়ে গিরিশৃঙ্গ আলিঙ্গন করছে,বপ্রক্রীড়ারত(গাছভাঙ্গা,মাটি উৎখাত) হাতীর মতো সুদৃশ্য সেই মেঘ।

 


 যক্ষ এখানে সমস্ত প্রেমিকদের যেন প্রতীভূ।'রঘুবংশে' ফেনিল সমুদ্রের অপূর্ব বর্ণনা আছে।এছাড়া কুমারসম্ভব,ঋতুসংঘার ইত্যাদিতে কালিদাস মানুষের জীবনকে প্রকৃতির নিরিখে জীবন্ত করে তুলেছেন।রবীন্দ্রনাথ তাঁর 'শকুন্তলা' প্রবন্ধে বলেছেন,"প্রকৃতিকে মানুষ করিয়া তুলিয়া তাহার মুখে কথাবার্তা বসাইয়া রূপকনাট্য রচিত হইতে পারে,কিন্তু প্রকৃতিকে প্রকৃত রাখিয়া তাহাকে এমন সজীব করিয়া তোলা ,তাহার দ্বারা নাটকের এত কার্য সাধন করাইয়া লওয়া,

 

এ তো অন্যত্র দেখি নাই।"

 

,

 

বৈষ্ণব সাহিত্যে ভগবানের সাথে ভক্তের মিলনের আড়ালে আসলে নরনারীদের অনুরাগ,মিলন, প্রেম-বিরহ,মান-অভিমানের কথাই আছে যা নিতান্তই সামাজিক।কবি বাসুদেব ঘোষ শিশু গৌরাঙ্গের ছবিটি এভাবে এঁকেছেন

 

 

গলায় সোনার কাঁঠি  সুরঙ্গ চতুনা আঁটি

 

ঝোঁটা বাঁধা সুচাচঁর কেশ

 

কত সাধ করি শচী  পরায়েছে ধড়া গাছি

 

ভুবন মোহন নব বেশ।

 

(চতুনা =টোপর)

 

এ একেবারে ঘরোয়া চিত্র।

 

কবীর,তুলসী দাস এঁরাও কিন্তু সামাজিক পটভুমিতেই তাঁদের দোহাগগুলি রচনা করেছিলেন।তুলসী দাস এক জায়গায় লিখেছেন

 

 

ঘরকা বহুরি পিরীত না পাওয়ে চিত চোরায়ে দাসী।

 

ধন্য কলিযুগ তামাসা তেরা দুখ লাগে ঔর হাসি।

 

 

যা কিনা একেবারে পারিবারিক একটি অভিযোগ।

 

 

মধুসূদনের রচনায় প্রাচীন বাংলার রক্ষণশীল

 

সমাজ ও রাজা মহারাজা শাসিত বাংলার পরিচয় পাওয়া যায়।প্রথম সার্থক  বাংলা গদ্যের রূপকথার বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গুলিতে প্রাচীন বাংলার মন্দির,ঘোড়সোয়ার,পালকি, উপবন,জঙ্গল,ডাকাত,কালো দীঘির জল ইত্যাদি সম্পর্কে যেন আমাদের নতুন করে বোধোদয় হয়।বন্দে মাতরম গানটির মধ্যেই যেন একটা গোটা দেশের ছবি ফুটে উঠেছে।আনন্দমঠ,রাজসিংহ প্রভৃতি উপন্যাসে তদানীন্তন ভারতবর্ষের রাজনৈতিক পরিবেশকে সূচিত করে।  রবীন্দ্রনাথের বিশাল রচনা সম্ভার প্রাকৃতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক সমস্ত পরিবেশের আকরভুমি।আমাদের মনে যে পরিবেশের চিত্রই ফুটে উঠুক না কেন সবই সেখানে পাওয়া যাবে।কবি 'অহল্যার প্রতি' কবিতায় বলেছেন

 

কী স্বপ্নে কাটালে তুমি দীর্ঘ দিবানিশি

 

অহল্যা,পাষাণরূপে ধরাতলে মিশি

 

 

নির্বাপিত হোম-অগ্নি তাপসবিহীন

 

শূন্য তপোবন ছায়ে? আছিলে বিলীন

 

বৃহৎ পৃথ্বির সাথে হয়ে একদেহ।

 

 

কবিতাটিতে পাথর হয়ে দীর্ঘ দিন পৃথিবীর বুকে অভিশপ্ত অহল্যা মিশে থাকার পর শাপমুক্তির কথা বলা হয়েছে।এইটুকু অংশেই কিভাবে প্রকৃতি চেতনা আমাদের যেন অন্য এক লোকে নিয়ে যায় বলে মনে হয়।রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্প গুলিতে তদানীন্তন বাংলার সামাজিক পরিবেশ পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে পাওয়া যাবে।নজরুলের রচনায় তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাথা বেদনা মাখা অসহিষ্ণু সমাজ ও রাজনৈতিক পরিবেশের ছবি ফুটে উঠেছে।

 

 

প্রকৃতি ভাবতেই আমাদের আর এক 'প্রকৃতির

 

কবি' ওয়ার্ডসওয়ার্থের কথা আমাদের মনে পড়ে যায়।তিনি Daffodil কবিতায় বলেছেন

 

 

I wandered lonely as a cloud

 

That floats in high o'er vales and hills

 

When all at once I saw a crowd

 

A host of golden daffodils

 

Beside the lake,beneath the trees

 

Fluttering and dancing in the breeze.

 

 

ইংরেজি কবিদের মধ্যে P B Shelly(To a skylark),Lord Tennyson (The Earth),Keats(Ode to a Nightingale প্রভৃতি কবির রচনায় উল্লেখযোগ্য প্রাকৃতিক

 

পরিবেশের পরিচয় পাওয়া যায়।পরবর্তী কালে জীবনানন্দে গিয়ে আমাদের প্রাকৃতিক ক্ষুধা আশানুরূপ ভাবে পরিতৃপ্তি পায়,যেখানে তিনি বাংলার আকাশ,লক্ষীপেঁচা,পাড়াগাঁ, বাতাস,মাঠ-ঘাট,নদী,খেয়ানৌকা,হাঁস চীল,গর্ভবতী ধানগাছ কাওকে বাদ রাখেন নি।


বাংলার দুই বন্দ্যোপাধ্যায়, বিভূতিভূষণ ও তারাশঙ্কর যেন সামাজিক, প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক সমাজকে দুহাতে করে আঁকড়ে ধরে রেখেছেন।বিভুতিভুষণের গল্প উপন্যাসে প্রাকৃতিক বর্ণনার কথা আমরা কে না জানি।তারাশঙ্কর তাঁর 'হাঁসুলিবাঁকের উপকথা' শুরুই করেছেন এভাবে

 

"হাঁসুলিবাঁকে পৃথিবীর সঙ্গেই যথা নিয়মে রাত্রি প্রভাত হয়"।তাঁর রচনায় অন্ত্যজ শ্রেণীর জীবনযাত্রা,চড়কপূজা,ধর্মপূজা,কবিগান,মেষপালক,ইংরেজ আমলের কাহিনী কি নেই? কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের রচনায়

 

বাঙ্গালীর সমাজিক পরিবেশের পারিপার্শ্ব, পারস্পরিক সংঘাত,দ্বন্দ্ব,অভিঘাত থেকে শুরু করে রাজনৈতিক পরিবেশ নিখুঁত ভাবে ফুটে উঠেছে।কুমুদরঞ্জন মল্লিক লিখেছিলেন

 

মাথা নাড়ে বেণুবন ঐ বুড়া বট

 

কতদিন কাটায়েছি তাদের নিকট।

 

 

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের 'সোনারমুকুট' কাব্যগ্ৰন্থে 'অপরাহ্নে'কবিতায় আছে

 

 

তোমার মুখের পাশে কাঁটাঝোপ,একটু সরে এসো

 

এ পাশে দেয়াল এত মাকড়সার জাল!

 

অন্যদিকে নদী, নাকি ঈর্ষা?

 

 

আসলে ব্যস্ততাময় অপরাহ্নে ছায়া ফেলে যায়

 

বাল্যপ্রেম

 

মানুষের ভিড়ে কোন মানুষ থাকে না

 

 

 সময়ের সাথে যেমন মানুষ বদলায়,তার চরিত্র বদলায় তেমনি পরিবেশও বদলায়।কিন্তু থাকে,যে আকারেই হোক থাকে,বিলীন হয়ে যায় না।পরিবেশহীন মহাশূন্যে সাহিত্যের সৃষ্টি হয় না।হয়তো ভাববস্তু পাল্টায়, কল্পনার জগৎ পাল্টায়,দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টায়,জ্ঞান বৃহত্তর হয় কিন্তু পরিবেশ একটা থাকেই।উপরোক্ত কবিতায়  বিষয়ভাবনা গতানুগতিকতাকে হয়তো ছেড়ে গেছে কিন্তু মানুষের মুখ,কাঁটাঝোপ, দেয়াল,মাকড়সা,নদী,অপরাহ্নকাল মিলে একটা পরিবেশের ছবি যথারীতি আছে।পরিবেশের এই উপাদান গুলি এখন হয়তো সাহিত্যের মধ্যে সরাসরি প্রত্যক্ষ ভূমিকায়

 

অবতীর্ণ হয় না,তাদের একটা বিশেষ নিরিখে ব্যবহার করা হয় কিন্তু সবমিলিয়ে পরিবেশ একটা তৈরি করে। কবিতায় কবির উন্নততর অভিজ্ঞতায় হয়তো একটা ছায়াময়তা এসেছে,কিন্তু পরিবেশকে বিলুপ্ত করে নি। ঘটনাটি আগে যে নদীতটে ঘটতো,সেই নদীতট হয়তো এখন বর্ণনায় এক জীবন্ত আকার প্রাপ্ত হয় কিন্তু আমাদের উপলব্ধিতে থেকে যায়।শোনা যায় কবি অতুল প্রসাদ একবার ইটালি দেশে বেড়াতে গেছিলেন, সেখানে মাঝিরা গন্ডোলা বাইতে বাইতে একটা অদ্ভুদ সুরে সমবেত কন্ঠেগান গাইছিলো।কবি সেই গানের অর্থ হয়তো  বুঝতে পারেন নি,কিন্তু সুরটি তাঁর মনের মধ্যে গেঁথে গেছিল।পরবর্তী কালে সেই সুর দিয়ে তিনি গান রচনা করেছিলেন-'ওঠো গো ভারত লক্ষী'।

 

 

সুতরাং সাহিত্যের উপর পরিবেশের প্রভাব থাকবেই,হয়তো বা পরিবর্তিত আকারে।

 

 

              --------–-----/

 

তথ্যসূত্র: কালিদাসের মেঘদূত-রাজশেখর বসু

 

চারুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদিত

 

বৈষ্ণব মহাজন গীতিকা

 

অতুল প্রসাদের জীবনী গ্ৰন্থ