বিষমদ ও স্বপ্ন
অঙ্কিত ঘোষাল
অন্ধকার নামলেই ভিড় বাড়তে থাকে ভাঙা বাড়িটায়। আর বাড়বে নাই বা কেন। সূর্য অস্ত যেতেই এখানে বসে দেশি মদের ঠেক। আসর জমাতে থাকে গরিব- গুর্বো মানুষগুলো। তাদেরই একজন নিতাই। মোড়ের মাথার চায়ের দোকানে বাসন ধোয়। যদিও আজ সে বারবার আনমনা হয়ে পড়ছে। সকালে বলা রাণির কথাগুলো তাকে ভাবাচ্ছে। রাণি এই গ্রামে বড় হয়ে উঠলেও, এখন সে কলকাতায় একটা বড় বাড়িতে ঠিকে ঝির করে। বেশ কয়েক বছর ধরেই তাদের মধ্যে ভাব - ভালোবাসা। কয়েকদিনের জন্য মায়ের অসুস্থতার কারণে গ্রামের বাড়িতে এসেছিল সে। দুপুর বেলা নদীর পাড়ে, নিতাইয়ের কোলে মাথা রেখে, তাকে পাহাড়াদারের কাজটার কথা বলে সে। সে, যে বাড়িতে কাজ করে, সেই বাড়িতে দেখাশোনার জন্য একজন পাহারাদার প্রয়োজন। তবে ওখানে থাকলে মদ খাওয়া চলবে না।
- “না, মদটা ছেড়েই দেবো। শালা শরীরটাও ভালো যাচ্ছে না কয়েকদিন। আজই লাস্ট”, নিজের মনকে বোঝায় সে।
খেয়ে টলতে টলতে বাড়ি ফেরে নিতাই। এই
ছোট্ট ঝুপড়িটায়, সে একাই থাকে। শুয়ে পড়ে এপাশ ওপাশ করতে থাকে । শরীরটা খুব খারাপ লাগছে।
ঘুম থেকে উঠে আবার মনটা খারাপ হয়ে যায় রাণির। এক সপ্তাহ হতে চলল, এখনও এলো না নিতাইদা। দাদাবাবুকে সে বলে রেখেছিল। না, এই লোকটাকে দিয়ে আর কিছুই হবে না। আসলে কাগজ পড়তে পারে না রাণি। তাই হয়তো তার চোখে পড়েনি। তার সেই গ্রামে বিষমদের প্রভাবে কুড়িজন মারা গেছে। আর তার মধ্যে নিতাই মণ্ডলের নামটাও ছিল।