আগমনী
বিশ্বনাথ দাসচৌধুরী
পিতৃহারা মেয়েটি অকূল পাথারে খাবি খাওয়া এক মা এর সাথে থাকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে; চতুর্থ সেমিস্টার।
রোজগার বলতে টিউশন করে পাওয়া মাসের শেষে কিছু টাকা।
ওহ ভুলে গেছি একটা কথা বলতে;
মেয়েটির নাম আগমনী।।
সেদিন এক আত্মীয় বাড়ীতে এলো।
কুশল বিনিময়ের পর গল্পসল্প শুরু হলো;
এরই মধ্যে মা গেলেন রান্না ঘরে টিফিন বানাতে।
হঠাৎ করেই ওই আত্মীয় আগমনীর হাত চেপে ধরলো।
আরো কাছে আসার চেষ্টা করলো।
কি করছো! ছাড়ো বলছি; সরে যাও পাশ থেকে।
ঝাঁঝিয়ে উঠলো আগমনী।
লজ্জায়, ভয়ে, ঘৃণায় মেয়েটির সারা শরীর কাঁপছিল।
মা এলেন টিফিন নিয়ে।
আগমনী সোফার এক কোণে মাথা নিচু করে চুপ করে বসে রইলো।
টিফিন খেতে খেতে মা এর সাথে কথা বলছে ওই আত্মীয়টি।
কথা শেষ, টিফিনও শেষ।
অত:পর সে নিজের বাড়ির দিকে রওনা দিল।
আগমনী, চুপ করে বসে আছিস কেন?
অরূপ কিছু বললো নাকি?
মা জিজ্ঞেস করলেন।
অরূপ হলো ওই আত্মীয়রত্নটির নাম।
মেয়েটি লজ্জায় মাকে কিছু বলতে পারলো না।
বরং নিজের রুমে গিয়ে হাউ হাউ করে কাঁদতে শুরু করলো।
কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়লো।
আগমনীর একটি স্থায়ী চাকরি চাই।
খবরের কাগজে একটি কোম্পানির ওয়াক-ইন- ইন্টারভিউয়ের বিজ্ঞাপন দেখে আবেদন করে।
কিছুদিন পর কল লেটার এলো।
মা এর আশীর্বাদ মাথায় নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয় ইন্টারভিউ দিতে।
অফিসে পৌঁছে দেখে ইন্টারভিউ চলছে।
যথা সময়ে আগমনীর নাম ডাকলো ইন্টারভিউ রুমে যাওয়ার জন্য।
ভিতরে আসতে পারি স্যার?
হ্যাঁ আসুন। সম্মতি পাওয়া গেল ভিতরে প্রবেশ করার।
নাম, ধাম, পেশা জিজ্ঞেস করে ইন্টারভিউ শুরু হলো।
এক অফিসারের চাহনি আগমনীর কাছে সাধারণ বলে মনে হলো না।
কেমন যেন লালসাপূর্ণ দৃষ্টি!
ইন্টারভিউ শেষে অফিসারটি বলেই দিলো .....
আপনার চাকরি হয়ে যাবে, চিন্তা করবেন না।কিন্তু................
অফিসারটি হ্য়তো আরো কিছু বলতে চাইছিল।
হাবভাব দেখে আগমনী ইন্টারভিউ রুম থেকে বেরিয়ে এলো।
বাড়ি ফিরে এলে মা জিজ্ঞেস করলেন কেমন ইন্টারভিউ হলো বেটি? আশা কিছু আছে?
নিজের যা হচ্ছে হোক।
মাকে সব কিছু বলাটা ঠিক হবে না; দূর্বল হয়ে পড়বেন।
উল্টে সমস্যা বাড়বে।
নাহ, কোনো আশা নেই বলে মনে মনে নিজের অস্তিত্বের প্রতি ধিক্কার জানাতে শুরু করলো।
একদিন আগমনী টিউশন শেষ করে বাড়ী ফিরছে।
সন্ধ্যা হয়ে গেছে।
পথিমধ্যে কিছু রকবাজ ছেলে তাকে দেখে শিস দেয়, গান করে।
এদেরকে উচিত শিক্ষা দিতেই হবে; এই ভেবে সোজা থানায় গিয়ে উপস্থিত হয় সে।
সব কিছু শোনার পর ডিউটি অফিসার তাকে একটি অভিযোগপত্র জমা করতে বলে।
অভিযোগপত্র লেখা হলো, জমা করাও হলো।
এরপর আগমনী চেয়ার থেকে উঠতে যাবে ঠিক সেই সময়েই অফিসারটি অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করতে শুরু করলো।
মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার অবস্থা।
যার কাছে এসেছে অভিযোগ করতে, শাস্তির দাবি জানাতে সেই কিনা ........
উপস্থিত বুদ্ধির উপর ভর করে চটপট থানা থেকে বেরিয়ে এল বেচারী আগমনী।
শরৎ কাল।
চারিদিক শিউলি ফুলের গন্ধে ম ম করছে।
নদীর চরে কাশফুলগুলি হওয়ায় মাথা নাড়ছে।
আকাশে বাতাসে আগমনীর সুর।
আর কিছুদিন পরেই মা দুর্গা সপরিবারে বাপের বাড়ীতে আসবেন।
আর ওই অভাগী মায়ের আগমনী নিজের জন্মকেই অভিশাপ বলে ভাবছে।
পিতামাতার লক্ষী হিসাবে জন্ম নেওয়া আগমনী আজ পুরুষদের যৌন আশা-আকাঙ্খা মেটানোর প্রতীক হিসাবে প্রতিভাত।
সে আত্মীয় হোক বা অনাত্মীয়।
আগমনী ভেবেছিল মা দূর্গার যেদিন বোধন হবে সেদিন তার কাছে ত্রিশূল ভিক্ষা করবে;
যে ত্রিশূল দিয়ে পৃথিবীতে থাকা এই অসুরদের নিজ হাতে বধ করবে।
কিন্তু আগমনীর মন একেবারেই ভেঙে গেছে।
মনের ভাবনা প্রকাশ করার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেছে।
আগমনীর সুর শুনতে শুনতে যখন সবাই মা দূর্গার আগমন অনুভব করছে ঠিক তখনই দুর্ভাগিনী মায়ের রক্তমাংসের আগমনী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করতে ব্যস্ত।
আগমনীর সুর শুনতে শুনতেই পুরুষদের নিকট যৌন হয়রানির শিকার মানবকন্যা আগমনী পৃথিবীকে চিরতরে বিদায় জানালো।