প্রদীপ কুমার দে
প্রদীপ কুমার দে
রম্যরচনা
খড়্গ হস্তে কালীর দৌড়
গন্ডগোল যত খাওয়ায়। রসিয়ে কষিয়ে খাওয়া বলে যাকে। পেঁয়াজ রসুন তেল আর উগ্র মশলায় মাখো মাখো কাটা কাটা পাঁঠার সাথে হুইস্কি পেটে চালান করেছিলাম গতরাতেই, বউকে না জানিয়েই।
সব কথা বউকে বলতে নেই। এটা সকলের অনুসৃত উপদেশ। আমি মানি। আর জানি আমার দুই বছরের বউও জানে এই কথাটি। তা জানুক গে ....
সবার মত আমারও একটা ভাল নাম আর একটা ডাক নাম আছে। ভাল নাম জেনে তোমরা কি আর করবে? ডাক নাম পাঠা। আগে এইরকম সব আদরের নামেই বাঁদর ছিলাম আমরা অবাধ্যরা।
কালী খাঁড়া নিয়ে আমায় তাড়া করেছে। কেন কিছু বোঝার আগেই পাঁইপাঁই করে দৌড় লাগালাম। প্রানপ্রন ছুটছি আর ছুটছি। খাল বিল নর্দমায় পড়ে একেবারেই নাজেহাল। ভয়ে প্রান উধাও। ফাটা সেলাই করা প্যান্ট কোমড় থেকে নেমে রাস্তায় লুটের মাল হয়ে গেছে যে কখন তার টেরও আমি পাইনি। লুটের কথাটি বলার কারণ হরির বাতাসা লুঠের মত পরিস্থিতি তখন প্রায়!
হাঁপাচ্ছি দৌড়াচ্ছি নান্টু ভাই ইশারায় বলে দিল,
-- আজ পাঠার গর্দান যাবে,
বোকা পাঁঠা কোথাকার,
আর ছোটার কি দরকার?
আমি ততোধিক ছুটছি, না তা মোটেও ঠিক নয়, আমিই মিথ্যাবাদী, ছুটিই নি, ভয়েই একই স্থানে লাফাচ্ছি আর কোঁতড়াচ্ছি, হাত পা ছোটাচ্ছি। ভয়ে ভয়ে একেবারেই শেষ।
পাছা দিয়ে দূর্গন্ধ আর ভয়ে কলকল করে ভাসিয়ে দিচ্ছি রাস্তা। আটা আর জলে আমি মাখামাখি। খড়্গ হস্তে কালী, নয়নে আগুন। কালীর লকলকে জ্বিহবা নাই, বৃহত্তম দন্তমূল।
আমি কালীর সামনে পড়ে গেছি, তবে একালী উলঙ্গ নয়, শাড়ি আবৃতা, উল্টো কেস!
ভোরের নিদ্রামগ্ন আমি জাগরিত।
ছিঃ ছিঃ লজ্জায় মাথা হেঁট, বিছানার দফারফা।
হলুদে জলে কর্দমাক্ত
গোলাপ আঁকা গোলাপী চাদর।
যে চাদরে শুয়ে আমি
ফুলশয্যায় নতুন বউকে
দিয়েছিলাম আদর!
সেই বউই সামনে দাঁড়িয়ে
চোখ দিয়ে আগুন ঝলসানো তেজ
আমি বিছানায় ছোট আর বড়র খেলা সাঙ্গ করেছি
দূর্গন্ধ ম ম করছে
বউয়ের কেলানি শুরু হয় হয়....
আগেও বলেছে এখনও মরে গিয়েও মা আকাশ থেকে মুখ বার করে হাসছে আর বকছে,
-- ভোরের স্বপন যে সত্যি হয়রে .....?
এরপরের বৃত্তান্ত অপ্রত্যাশিত অপ্রাকশিত রাখলাম নিজের ইজ্জত বাঁচাতেই।
অফিস যাওয়া হয়নি। যত গালি ছিল সব উদরে। গা গতরের অবস্থা কাহিল। বউ কে খুশি করতেই বাজারে থলি হাতে।
ভোরের স্বপ্ন মিথ্যা হয় না। ভয়ে ভয়ে আছি। কি হয় কি হয়?
মায়েরা ঠিকই বলত। মিলেও গেল।
রাস্তায় বিরাট আলোচনা চলছে। মুদীওয়ালা খোলসা করে দিল,
আরে কসাই কালীদা আজ সকালে ওর পাঠাটাকে জবাই করার সময় পাঁঠা বেচারা ছিটকে বেরিয়ে একেবারে ছুটে... দে দৌড় ..
আর কালী ব্যাটার ছেলে খাঁড়া নিয়ে ওর পিছনে সে কি দৌড় ....
----