শ্রীঅবোধ কিশোর মাহাত
শ্রীঅবোধ কিশোর মাহাত
ছোট্ট ভগবান
প্রায় ছয় মাসের ছেলে কর্ণ কে নিয়ে জেঠিমা বের হলো পাশের গোলদারি দোকান দিকে,তখন এক রাম নারায়ণ রাম গাড়ি কালেকশন এর উদ্দেশ্যে বের হবার প্রস্তুতি নিচ্ছে। হঠাৎ তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে সুজিত কর্ণকে কোলে তুলে নেয়।
ছোট্ট ছেলেকে কে না ভালোবাসে?তারাই তো ভগবানের সব থেকে কাছের, প্রিয় মানুষ।আর ওই রকম মুগর,নাদুস নুদুস হলে তো আর কথাই নেই।মাথা গোল, হালকে মুখে হাঁসি;ঠিক যেন তারা বাবা মহেশ্বরের মতো।
"বড়ো হলে ছেলে মা কে চিনবেই না,"-যেটা এখন লোকমুখে প্রচারিত।
সুজিত তাকে কোলে নিয়ে ঘুম পাড়ানি গান বলে বলে সেই গাড়িতে লেখা ভুল ধরতে থাকে।এটা যেন তার জন্মগত অভ্যাস।
তার বাবাও তাকে প্রায়ই এটা বলত।
জয় বাবা "হাতিখেদা ঠাকুর "।
এটা "হাথিখেদা'' হবে।
"এতদিন থেকে লেখা আছে?" ড্রাইভার যেন হুকিয়ে তাকে বলে।
"ভুল লেখা আছে",সুজিত বলে ।
"এতদিন কারো নজরে পড়ে নি তাই।"
"তাহলে সব্বাই ভুল?"
সব্বাই ভুল বলছি না। তবে এখানে ভুল লেখা আছে সেটাই বলছি- সুজিত বলে।
সুজিত তো ছাড়বার পাত্র নয়।তাই ড্রাইভার বেশি আর বাক্ বিতন্ডায় না জড়িয়ে হার মেনে নিল।
জেতার মজা থেকে প্রায় আধা ঘন্টা নিয়ে থাকা কর্নের ওজনকে সে কিছু মনেই করলো না।
মহেশ্বরের দাদা বানেশ্বরকে সে দিতে চাইলে বলে,
"অভ্যাস করে রাখ রে ভবিষ্যতে কাজে দেবে"।
সুজিত মাথা হেট করে মনে মনে হাসতে থাকে।
সে নিরুপায় হয়ে কর্ণকে দিতে যাই তাদের বাড়ি।
বাড়ির সবাই তখন ধান ভাঙার কাজে ব্যাস্ত।মুখ ঘোরাবার যো নেই।একমাত্র তার মা রানীও রান্নার কাজে কিচেনে ছিল।তাকেই বা কিসে কম ব্যস্ত বলা যায়?
ছোট্ট ভগবান তখন সুজিতের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলছে,
এবার কি করবে জ্যাঁঠা বাবা?
আমি তো বসতেও পারি না ভালো করে,তাহলে আমার মাকে তুমি কি করে দেবে?
দেখছি।
আমাকে ছুঁয়ে থাকলে তোমাকে গঙ্গাজলে চাঁন করতে হবে আর না ছুঁয়ে থাকলে তোমার ছোট্ট ভগবান মাটিতে পড়ে কষ্ট পাবে! দেখছি তুমি কি চাও?
এতো মহা মুশকিলে পড়লাম; সুজিত মনে মনে বলে উঠলো।
"কই লাও গো বাবুকে।" সুজিত বলে।
"হ গো,তুমি ছাড়ো।"- কর্ণের মা বলল।
কিন্তু ছাড়লো না যেহেতু ছেলেটা পড়ে যাবে।আবার রানীও ধরলো কর্ণকে।মাঝখানে ছোট্ট ভগবান মুচুক মুচুক হাসতে থাকে।