রতন কুমার দাস
রতন কুমার দাস
বইয়ের নাম- ফেলুদার সঙ্গে পাঁচ দশক
লেখক - সব্যসাচী চক্রবর্তী
প্রকাশনী - বিচিত্রপত্র গ্ৰন্থন বিভাগ
মুদ্রিত মূল্য -৩২৫ টাকা
বইয়ের মাপ- ডিমাই সাইজ (হার্ডকভার)
বইটির প্রকাশকাল - ফেব্রুয়ারি,২০২৪
সম্প্রতি পড়ে উঠলাম “বিচিত্রপত্র গ্রন্থন বিভাগ” থেকে সদ্য প্রকাশিত প্রকাশিত বই “ফেলুদার সঙ্গে পাঁচ দশক”। হার্ডকভারে
মোড়া ১২০ পৃষ্ঠার এই বইটির দুই মলাটের মধ্যে রয়েছে ফেলুদারূপী সব্যসাচী চক্রবর্তীর চলচ্চিত্র জগতে "ফেলুদা" হয়ে ওঠার আখ্যান।সব্যসাচী চক্রবর্তী নিজে একজন জাত অভিনেতা হিসেবে তাঁর দীর্ঘ অভিনয় জীবনে করেছেন বিভিন্ন রঙবেরঙের চরিত্রের অভিনয়। তাদের মধ্যে বলাই বাহুল্য, সবথেকে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন ফেলুদা চরিত্রে অভিনয় করে। নিজের অভিনয় জীবনে দশটিরও বেশি ফেলুদা টেলিফিল্ম,সাতটি বড়োপর্দার জন্য এবং একটি ফেলুদা নাটক পর্যন্ত করেছেন মঞ্চে। দীর্ঘ সময়ের এই “ফেলু” যাত্রা কেমন ছিল,তারই আখ্যান ধরা পড়েছে এই বইটির দুই মলাটের মধ্যে। এখানে উল্লেখ্য বর্তমানে তিনি ফেলুদা রূপে চলচ্চিত্রে অভিনয় না করলেও একটি বিখ্যাত অডিও স্টোরি প্লাটফর্মে ফেলুদা চরিত্রের জন্য কন্ঠ প্রদান করে থাকেন।সে অভিজ্ঞতাও বাদ যাইনি তাঁর লেখা এই বইটিতে।বইটির ভূমিকা লিখেছেন সন্দীপ রায়।যেটা অবশ্যই বাড়তি পাওনা।এখানেই শেষ নয়,বইটিতে বিভিন্ন ফেলুদা চলচ্চিত্র ও টেলিফিল্মগুলির আলোকচিত্র রয়েছে অনেক।
সবথেকে ভালো লেগেছে লেখনীশৈলী।সব্যসাচী চক্রবর্তী নিজে এর আগেও বেশ কিছু গ্রন্থ লিখেছেন।কাজেই লেখার ভাষা অত্যন্ত সাবলীল এবং বৈঠকী আড্ডার ছলে লিখে গেছেন তাঁর দীর্ঘ পাঁচ দশকেরও বেশি সময়ের ফেলুদা যাত্রাপথ।কাজেই লেখনীর গুনে একাধিকবার বইটিকে পড়ে নেওয়াই যায়। পড়তে গিয়ে অনেক অজানা তথ্য ও জানতে পেরেছি এই বই থেকে।যেমন- ”ঘুরঘুটিয়ার ঘটনা” টেলিফিল্মে টিয়ার গলায় যে “ত্রিনয়ন ও ত্রিনয়ন” ধাঁধাটি শোনা যায়,তার কন্ঠ দিয়েছিলেন স্বয়ং "তোপসে" শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়।
আবার এও জেনেছি দিল্লীতে থাকার সময় থেকেই সব্যসাচী চক্রবর্তী বই পড়েই ফেলুদার বিভিন্ন গুণগুলি নিজের মধ্যে রপ্ত করার চেষ্টা করতেন। যেমন পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা,অনুসন্ধিৎসা বৃদ্ধি করা, ফেলুদার মতো জীবনযাপন করতে চেষ্টা করা ইত্যাদি। "সত্যজিৎ -সৌমিত্র" জুটি ফেলুদার চলচ্চিত্রের অবশ্যই একটা মাইলস্টোন, কিন্তু "সন্দীপ-সব্যসাচী" জুটিও খারাপ নয়।এটাই আমার মনে হয়েছে ফেলুদা চলচ্চিত্র এবং টেলিফিল্মগুলো দেখে।অমন কন্ঠস্বর, দৈহিক উচ্চতা, মেদহীন চেহারা, সুদক্ষ অভিনয় প্রতিভা সমস্তটা একটি মানুষের মধ্যে পাওয়া বেশ দুস্কর। কিন্তু,সব্যসাচী চক্রবর্তীর মধ্যে সেটা সবসময়ই ছিল।
বয়সের কারণে ফেলুদা অভিনয় থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তটাও ছিল একান্তই নিজের।বইটির শেষে একটি জায়গায় রয়েছে বর্তমানের ফেলুদা অভিনেতাদের নিয়ে খেদোক্তি - “এখনকার ফেলুদাগুলো অমুকের ফেলুদা-তমুকের ফেলুদা হচ্ছে বটে, কিন্তু সত্যজিতের ফেলুদা হচ্ছে না।”
বিষয়টাকে কিছুটা আমিও সমর্থন করি।
পরিশেষে,বইটির কয়েকটা জায়গার খারাপ লাগা নিয়ে একটু বলতেই হয়।বইটার সূচীপত্র নেই, পরিচ্ছেদ “এক”,”দুই” করে শুরু হয়েছে, আবার শেষও হয়েছে। শিরোনামে যদি যে বিষয়টি নিয়ে লেখা রয়েছে তা জুড়ে দেওয়া হতো ভালো হতো। দ্বিতীয় খারাপ লাগা হলো, আলোকচিত্রগুলো রাখা হয়েছে কিছু শেষে কিছু বইয়ের মাঝে। খুব ভালো হতো যদি একটা আলাদা “সেগমেন্ট” করে ছবিগুলোকে রাখা হতো।বইয়ের আরো বেশ কিছু ছোট বড়ো সমস্যা দেখে বেশ বোঝা যায় বইটা খুব তাড়াতাড়ি প্রকাশ করতে গিয়ে পরিকল্পনায় কমতি রয়ে গেছে। আরো একটা বিষয়,এমন সুন্দর বইয়ের সাথে “ফেলুদা বুকমার্ক” রাখলে আরো ভালো হতো।
তবে সামান্য কিছু খারাপ লাগাগুলো সরিয়ে রাখলে,বইটা আট থেকে আশি সকল ফেলু ভক্তের জন্যই খুবই ভালো একটি বই।সকল ফেলু ভক্তের অত্যন্ত একবার এই বইটি পড়ে দেখা উচিত।
(পাঠকের সুবিধার্থে বইটির যাবতীয় তথ্যাদি এই লেখাটির ওপরে জুড়ে দেওয়া হলো)