ত্রিশূলধারী
বর্ণালী সাহা
স্বপ্নতরী ডুবিয়ে আমি নৌকোয় উঠেছি বসে,
মাঝি শুধায় বলো নারী, তোমায় পৌঁছে দেই কোন দেশে?
অশ্রু ভরা নয়ন তুলি তাকিয়ে দেখি দুই ধারে,
এক প্রান্তে অথৈ জল তো অপর পারে স্বজন হারানো ধু-ধু প্রান্তর।
নিয়ে যাও মাঝি কোন গহীন বনে,
লুকোবো আমি শান্ত মনে,
নেকড়েদের হাতে খুইয়েছি মান,
কেউ কি আমায় করবে সম্মান?
অট্টহাসি দিয়ে মাঝি বলে, নারীর মান এত ঠুনকো নাকি?
বস্ত্র ভাঁজেই কেবল সুসজ্জিত সেকি?
বাকরুদ্ধ হয়ে আমি শুধাই মাঝিকে,
ওরা যে বলে বয়স আমার বড়ই কাঁচা,
পড়ালেখায় কেবল বেঁধেছি কেন খাঁচা?
যদি আমি বিয়ে করে হতাম সংসারী,
অদৃষ্টের লিখন তবে হতো যে অন্যধারী।
পুনরায় অট্টহাসে মাঝি শুধালো,
নারী তোর বয়স কত? কুড়ি, চল্লিশ, ষাট নাকি?
বিকৃত যার যৌন খিদে, আট মাসকেও দেয় না ফাঁকি।
তবে মাঝি বলে দাও তুমি, বানাবো কিভাবে নিজের চারপাশে লৌহ দূর্গ আমি?
নিক্ষেপ হবে না আর কোন লোলুপ দৃষ্টি,
দূর্গের ভেতর পুড়িয়ে ফেলব আমি আমার সব সৃষ্টি।
গর্জে উঠে হুংকার দিয়ে বলে ওঠে মাঝি,
দূর্গের ভেতরই কি তবে লুকোনো তোর সাজি?
নেকড়ের দল শুঁকে নেবে তোর শরীরের গন্ধ,
কত দরজা বানিয়ে তুই নিজেকে করবি বন্ধ?
তার চেয়ে তুই রক্তস্নাত এই নদীতে, ভাসিয়ে দে যুদ্ধের ভেলা,
আইনের সঙ্গ নিয়ে এগিয়ে দে তোর পথ চলা।
তবে কি মাঝি সারথী হয়ে সঙ্গ দেবে নৌকোর পাল তুলে?
নিশ্চুপ দেখি শুধাই আমি,
ময়দানে কি তবে একা রেখে গেলে চলে?
অশ্রু নয়নে বলে মাঝি, দগ্ধ বক্ষে ছবি আঁকি,
গল্প যে রয়েছে অনেক বাকি।
ছিল আমার এক নারী, লুকোচুরিতে দিন চলত ভারী।
আমার দুর্ঘটনার খবর শুনে, ছুটে গেল হাসপাতাল পানে,
আধাঁর রাতে নেকড়ে দলের পড়লো সে ফাঁদে,
দুদিন ধরে খুঁজেছি কত, পাইনি যে আর তাকে,
নিথর দেহ পেয়েছিনু পরে, এই নদীরই পাঁকে।
কেঁদো না মাঝি বলছি আজই, ওদের উল্লাসের দিন ফুরিয়েছে সবই ,
শুধু সারথী হয়ে সঙ্গ দিও, সাইরেন বাজিয়ে ঘোষণা করো ,
যুদ্ধের পরোয়ানা হয়েছে যে জারি।
আমরা নারী, আমরা পারি,
কারন আমরাই যে ত্রিশূলধারী।।