মুন্নি
প্রিয়নাথ নাথ
পারুল : চেনা নেই জানা নেই, যোগাযোগের কোন সূত্র নেই, কোথাকার কে, ওমনি ধরে নিয়ে চলে এল বাড়িতে! আদিখ্যেতা! কি না, সংসারের এত কাজ তুমি একা আর কতদিন করবে পারু? এবার তোমার একটা হেল্পিং হ্যান্ড চাই। হেলপিং হ্যান্ড না ছাই!
ভবানি : আরে বাবা, তোমার যে একটু বিশ্রাম হবে, একটু আরাম হবে সেটা বুঝতে চাইছ না কেন?
পারুল : আমি তো তোমাকে কোনদিন বলি নি যে আমার একটা কাজের লোক লাগবে। তখন মিঠাই বাবাই কত ছোট ছিল, তুমি জঙ্গল মহলে চাকরি করতে, মাসে-দুমাসে একবার বাড়ি আসতে। বুড়ি শাশুড়ি সহ সবাইকে নিয়ে আমি সংসার চালাইনি? তুমি তো টাকা পাঠিয়ে দিয়েই খালাস।
ভবানি : শোন পারু, একটা গান আছে না, ঐ যে, কী যেন? হ্যাঁ হ্যাঁ, চিরদিন কাহারও সমান নাহি যায়। আরে বাবা, এতদিন কষ্ট করেছ বলে চিরকাল কষ্ট করবে? আর সুযোগটা আচমকাই যখন সামনে এসে গেল.....
পারুল : আর সুযোগ, সুযোগ না শনি কে জানে? মা-বাপ কোথায়, কোন রোগশোক আছে কিনা কিচ্ছু জানা নেই, ধরে নিয়ে চলে
এল বাড়িতে। এই নাও তোমার হেলপিং হ্যান্ড, হাতে হাতে তোমার অনেক কাজ করে দেবে, বিনিময়ে শুধু দুবেলা দুমুঠো খাবে। আমার কিন্তু ভালো ঠেকছে না বাবা।
ভবানি : এত চিন্তা কিসের তোমার? আর মাত্র দিন কুড়ি বাদে আমিও তো ট্রান্সফার নিয়ে কলকাতার অফিসে চলে আসছি পারু।
পারুল : আমিও তো সেটাই বলছি, শোন না, ছেলে মেয়ে বড় হয়ে গেল, মা আগের থেকে অনেক সুস্থ, তুমিও চলে আসছ, আমার কোন কষ্ট হবে না, তুমি এই আপদ বিদেয় কর।
শচীবালা(পাশের ঘর থেকে) : ভবাইন্যা, অ ভবাইন্যা, কহন আইছস, কাইল রাইতে? আমারে ডাকস নাই ক্যান? তর লাইগ্যা পথ চাইয়া বইস্যা থাহি। আরে কতা কস না ক্যান?
অ পারু, ভবাইন্যার গলা হুনলাম, কতা কয় না ক্যান?
ভবানি : হ্যাঁ মা, আসছি, আমি তোমার ঘরে আসছি।
শোন পারু, মা কিন্তু সেকেলে মানুষ। জাত, ধর্ম, ছোঁয়াছুঁয়িতে অসম্ভব বাছবিচার করেন। নিজের বাপের বাড়ি শ্বশুর বাড়ি দুটোই গোঁড়া ব্রাহ্মণ পরিবার, সুতরাং....
পারুল : সুতরাং মাকে বলতে হবে, শুনুন মা আপনের পোলা এই মাইয়াডারে জঙ্গল মহলের এক বামুনের ঘর থেইক্যা উঠাইয়া লইয়া আইছেন আমার হেলপিং হ্যান্ড হিসেবে। তাই তো? শোন, এই সংসারে আমি নতুন না, মাকে কী বলতে হবে সেসব আমি ভালোই জানি। আর আমার নিজের এসব জাত ধর্ম ছোঁয়াছুঁয়ি নিয়ে যে একটুও বাতিক নেই, সেটা তুমি
ভালোই জান। আমি এ ব্যাপারে তোমারই শিক্ষায় শিক্ষিত, তাই তো?
ভবানি : আমি জানি তো, আমার পারুকে বেশি বোঝাতে হয় না, একটুতেই সব বুঝে যায়। আ আ আ মি হান্ড্রেড পারসেন্ট শিওর যে আমার মি ই ই ষ্টি বৌ সব ম্যানেজ করে নেবে।
পারুল : অ্যাই, অ্যাই, কী হচ্ছে কী? ছাড়, ছাড় বলছি, বাবাই-মিঠাই জেগে গেছে, মা ডাকছেন যাও, ছাড়, ছাড় বলছি, জঙ্গলে থেকে থেকে, হি হি হি, জঙলী কোথাকার একটা!
ভবানি : একশ শতাংশ ঠিক বলেছ, একমাস কোন মানুষ যদি সঙ্গী হারা থাকে সে তো জঙলীর মতোই হয়ে যায়। আর সঙ্গী হারা জঙলীরা সঙ্গীকে ফিরে পেলে এইভাবে, এইভাবে জাপটে ধরে। উ উ উ।
পারুল : প্লিজ, প্লিজ লক্ষীটি, ছাড়, ছাড় আমার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
★ ★ ★
পারুল : অ্যাই মেয়ে তুই বাথরুমে যা, সাবান শ্যাম্পু আলাদা করে তোর জন্যে রেখে এসেছি। আমার কাচা চুড়িদার রাখা আছে, চান করে পরে নিবি।বিকেলে আবার তোকে নিয়ে বেরোতে হবে, কিছু জামাকাপড় কিনে আনতে হবে।
পারুল : আচ্ছা, কাল রাতে ঘুম চোখে ভালো বুঝিনি, তুমি কীভাবে ওকে পেলে আবার একটু বল তো।
ভবানি : আরে, আমি আর ঐ যে আমার অ্যাসিসট্যান্ট বিশ্বনাথ সাড়ে চারটে নাগাদ অফিস থেকে বেরিয়েছি, পঁচিশ কিমি জঙ্গুলে রাস্তা পেরিয়ে ঝাড়গ্রাম স্টেশন থেকে সাড়ে সাতটার ট্রেনটা ধরব বলে। ড্রাইভার ছিল বুধিয়া। একটা জায়গা আছে বেশ গভীর জঙ্গল, দিন না ফুরোতেই রাস্তা বেশ অন্ধকার। হেড লাইটের আলোতে দেখা গেল চাদর মুড়ি দেওয়া একজন প্রাণপণে গাড়ি থামাতে চাইছে। বুধিয়াকে বললাম, দাঁড় করাও। জোরে ব্রেক মেরে গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়তেই, মেয়েটি হাঁউমাঁউ করে ঝাঁপিয়ে পড়ে যেটা বোঝাতে চাইল তা হল কারা যেন ওকে খুঁজে পেতে চাইছে, পেলে ওকে ধরে নিয়ে যাবে। আমরা যেন ওকে বাঁচাই। তাড়াতাড়ি ওকে গাড়িতে তুলে সামনের সিটে বসিয়ে ঝাড়গ্রাম নিয়ে এলাম।
পারুল : সাংঘাতিক! তারপর? ওকে কারা খুঁজছে?
ভবানি : ওদের জঙ্গল পার্টির লোক বলে ওখানে সবাই। পাঁচ বছর আগে জঙ্গল পার্টির লোকেদের সাথে গ্রামের মানুষের একটা লড়াই হয়েছিল, তাতে অনেকে হতাহত হয়েছিল। কয়েকজন বাচ্চা ছেলেমেয়েকে ওরা ধরে নিয়ে গিয়েছিল। ওরা ছোট, মানে আট-দশ বছরের ছেলেমেয়েদের ধরে নিয়ে গিয়ে অস্ত্রশস্ত্র চালানো শেখায়, নানারকম যুদ্ধ করার ট্রেনিং দেয়। মুন্নিও পাঁচ বছর ওদের ট্রেনিং নিয়েছে। সুযোগ খুঁজছিল পালিয়ে আসার, সেদিন সুযোগ পেয়ে পালিয়ে এসেছে। ওরা টের পেয়ে ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। ও জানে না ওর বাবা-মা কোথায়, বেঁচে আছে না মারা গেছে। এবার তুমিই বল ওকে কোথায় ফেলে আসব?
পারুল : না গো, আমি রাগ করে বলে ফেলেছি, তুমি ঠিক কাজ করেছ। ওকে বেশ চালাকচতুর বলেই মনে হয়। আমি ওকে দিয়ে শুধু কাজ
করাব না, ওকে লেখাপড়াও শেখাবো।
ভবানি : আমি এই জন্যেই তো বলি, পারু উ উ উ আমার মিষ্টি বৌ, উ উ উ।
পারুল : ধ্যাৎ।
★ ★ ★
শচীবালা : দ্যাখ বৌমা, আমি তোমারে পরিষ্কার কইরা কইতাছি, আমি অর হাতে কিছু খামু না। আমার নিরামিষ ডাইল-ভাত-সব্জী তুমিই পাক করবা, তুমি রানলে খামু, নইলে আমি নিজেই....
পারুল : ঠিকাছে ঠিকাছে মা, আপনার সব রান্না আমি নিজেই করব, নিজের হাতে আপনাকে
খেতে দেব। আর আমাদের রান্নাও তো মুন্নি করে না, ও কেটেকুটে, ধুয়ে দেয়। আর আমাদের বাসন মাজা, ঘর মোছার জন্য লোক তো আছেই। জামা কাপড় তো আমিই ওয়াশিং মেসিনে কেচে দিই, ও রোদে মেলে শুকিয়ে নিয়ে গুছিয়ে রাখে। মুন্নিটা খুব কাজের মা, হাত থেকে টেনে টেনে কাজ করে। পড়াশোনা করারও বেশ আগ্রহ আছে। আহারে, বাপ-মাকে ছেড়ে এখানে এসে পড়ে আছে, আমরা ছাড়া ওর আর কে আছে বলুন!
শচী বালা : ক্যান অর বাপ-মায়ের কী হইছে, ভবাইন্যা অরে পাইল ক্যামনে?
পারুল : সে অনেক কান্ড মা, জঙ্গলের গুন্ডারা গ্রামে ঢুকে বোমা মারছিল, গুলি চালাচ্ছিল তাতেই ও পালিয়ে এসেছে, সে অনেক কথা। পরে একসময় আপনাকে পুরোটা বলব। ও
ভালো ঘরের মেয়ে মা।
শচী বালা : হ ভালা ঘরের মাইয়া, কী জাত তার ঠিক আছে? পোড়ারমুখীর ভাইগ্য ভালা ভবাইন্যা অরে পাইছে, নাইলে কই যে ভাইস্যা যাইত! হায় হায় রে, কচি মাইয়া! তবে আমার ঐ এক কথা, আমারে তুমি নিজের হতে রাইন্ধা খাওয়াইবা।
পারুল : আচ্ছা, আচ্ছা মা, আপনি চিন্তা করবেন না।
★ ★ ★
ওসি সাহেব : তুই এ বাড়ির কে?
মুন্নি : আমিতো ই বাড়িতে থাকি, খাই, কাজ কাম কইরি, মাসি মনি আমাকে পড়াও শিখায় গো।
ওসি সাহেব : কবে থেকে এ বাড়িতে কাজে লেগেছিস?
মুন্নি : ই তো, তিন মাস হই গিল।
ওসি সাহেব : তার আগে কোথায় ছিলি?
মুন্নি : মিদিনীপুর। আমাকে মেসোমশাই ইখেনে লিয়ে এসেছে গো।
ওসি সাহেব : জয়ন্ত, নোট ইট, মিদনাপুর। কী হয়েছে পুরোটা বল। মেসো মশাই কোথায়?
মুন্নি : মেসো মশাই তো পরশু দিন অপিসের টেনিং দিতে গিছে। ফরেস্টারির টেনিং। মেসো মশাই তো ফরেস্টারি অপিসার, মিদিনীপুরে ছিল। সাত দিন বাদে ফিরবেক। আমরা রেইতে খেইয়ে দেইয়ে শুয়ে পড়েছি, ঘুমিয়েও গিছি। মাইজরেতে, তখন কটা বাজে জানিনা। ছাদের দরজায় একটা জোরে আওয়াজ শুইনে আমার ঘুম ভেইঙ্গে গেল। আমার ঘুম একটু পাতলা তো। আমি কান খাড়া করে শুইনতে চেষ্টা কইরলাম। কেমন ক্যাচোর ক্যাচোর আওয়াজ হইচ্ছে, মনে লিচ্ছে কেউ তালা ভাইঙছে গো। আমি তাড়াতাড়ি উইঠে মাসি মনির ঘরে গিলাম। মাসি মনি কে ডেইকে তুলে বুইললাম। মাসি মনি ত বিশ্বাসই কইরতে চায় না। বুইল্লো তোর পেটে গ্যাস হইছে, ঘুমিয়ে যা। পরে বুইল্ল লাইট জ্বালা। লাইট জ্বইলে উঠতেই হুড়মুড় করে একটা মরদ হাতে ভোজালি লিয়ে ঘরে ঢুইকে ধমক পাইড়ল।
ওসি সাহেব : একজনই?
মুন্নি : না, আর একঠো মরদ ঠাম্মার ঘরে ঢুইকে পইড়ল।
ঠাম্মা চ্যাঁচাইল। লোকটা বুইল্ল, এই বুড়ি চ্যাঁচাইলে গলা টিপে মেইরে দিব।
ওসি সাহেব : তোরা চ্যাঁচাস নি?
মুন্নি : মিঠাই বাবাই চিৎকার কইরে কাঁইদছিল। মাসি মনি চোর চোর, ডাকাত বুইলে চ্যাঁচাইল। লোকটা জোরে ধমক দিল আর মাসি মনির একটা হাত এমন ভাবে মুইচড়ে ধইরেছে কী বুইলব। বলে আলমারির চাবি দে শিগগির, নইলে পেটে ইটা ঢুকিয়ে দিব।
ওসি সাহেব : আচ্ছা! তা তুই কী করছিলি, তাকিয়ে তাকিয়ে মজা দেখছিলি?
মুন্নি : না, মাসি মনির হাত মোচড়াচ্ছে দেইখে আমি আর ঠিক থাইকতে পারি লাই। দিলাম এক ঝটকা লাথি লোকটার বে-জায়গায়। লোকটা মাটিতে ছিটকে পইড়ে গিয়ে কাতরাতে লাইগল। ভোজালিটা পড়ে গেল, উটা তুইলে লিয়ে ঠাম্মার ঘরে গিয়ে দেখি ওই মরদটা ঠাম্মার গলা টিইপ্পে ধইরেছে। ছুইট্টে গিয়ে ওর হাতে কোপ বসায়ে দিলাম। লোকটা আঁ আঁ কইরতে কইরতে ছাদের দিকে ছুট লাগাইল। আমি তাড়া কইরলাম। লোকটা পাইপ বেইয়ে নেইমে পাইলে গেল। আমি নীচে নেইমে দেখি এই মদ্দাটা তখনও কোঁ কোঁ কইরছে। কলার ধইরে টেইনে লিয়ে গিয়ে ঐ যে আমি যে ছুড ঘরটায় শুই সেটাতে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে ছিটকিনি লাগায়ে দিইছি। পাড়ার লোকজন আইসল, ডাক্তার ডেইকে মাসি মনিকে ওষুধ
খাইয়ে ঘুম পাড়ায়ে দিল। খুব যন্তর্না হচ্ছিল তো। ডাক্তার বাবু বুইল্ল, মাসি মনির হাতের ফটো তুইলতে হবেক। বাপিদা, ঐ যে পাশের বাড়ির গো, থানায় ফোন কইরে আপনাদের খবর দিল। বাপিদারা মেসোমশাইকেও ফোন করে জানাই দিল। মেসোমশাই দুপুরের মইধ্যে চইলে আইসবেক।
ওসি সাহেব : তোর ভয় করে নি?
মুন্নি : না না, এসব ভোজালি টোজালি ত জলভাত। পিস্তল হলেও লইড়ে যেতাম। আমি টেনিং করেছি না, পাঁচ বছর।
ওসি সাহেব : ট্রেনিং? কীসের ট্রেনিং?
মুন্নি : উই যে গো জঙ্গল পার্টির লোকেরা
আমাকে ধইরে নে গেছিল না, ওখেনে টেনিং শিখায়েছে তো, পাঁছ বছর।
ওসি সাহেব : জয়ন্ত, নোট ইট, মিদনাপুর, জঙ্গল পার্টি, ট্রেনিং। এই মেয়ে শোন, এই লোকগুলো তোর লোক না তো?
মুন্নি : কী যে বুলেন সার, আমার লোককে আমি ধরায়ে দিব? আমি উয়াদের চিনি না।
ওসি সাহেব : জয়ন্ত, পাশের ঘরে ফোর্স ঢুকিয়ে লোকটাকে অ্যারেস্ট কর। কান টানলে মাথা আসবে। ভদ্রমহিলা তো ঘুমোচ্ছেন, দেখি মাসিমা কোথায়। হ্যাঁ মাসিমা, বিরাট ফাঁড়া কেটেছে বলুন। আমরা লোকটাকে ধরে নিয়ে গেলাম। আর এই মেয়েটাকে নিয়ে যাচ্ছি, আসলে কেউই আমাদের সন্দেহের তালিকার বাইরে নয় জানেন তো। তাছাড়া মেয়েটাকে
জঙ্গল মহল থেকে এখানে তুলে আনা হয়েছে।
শচী বালা : কী কইলা, তোমরা মুন্নারে লইয়া যাইবা? ক্যান, অ কী করসে? তোমরা কেমন পুলিশ? যে মাইয়াডা আমাগো পরান বাঁচাইছে তোমরা তারে থানায় লইয়া যাইবা! অ না থাইকলে যে আইজ কী হইত! শোন, মুন্না যাইব না। বৌমা ওষুধ খাইয়া ঘুমাইতাচে, মুন্না আইজ রাইন্ধা বাইড়া আমাগো খাওয়াইব। আমি আইজ অর হাতেই খামু, অ আমাগো ভগমান। ভবাইন্যা আইলে পরে তোমাগো কাছে পাঠামু নে অরে। অহন যাও তোমরা।
ওসি সাহেব : ঠিক আছে মাসিমা, আপনার কথায় আমরা ওকে নিয়ে যাচ্ছি না, ভবাবিবাবু এলে একবার থানায় পাঠাবেন।
★ ★ ★
ওসি সাহেব : শুনুন ভবানিবাবু, আমরা মুন্নির সাহসিকতার ঘটনা বিস্তারিত লিখে ডিএম সাহেবের কাছে পাঠিয়েছিলাম। আমরা আরও লিখেছি যে একটি সন্ত্রাসবাদী দলের খপ্পর থেকে পালিয়ে ও জীবনের মূলস্রোতে ফিরেছে, হারিয়েছে নিজের বাবা-মাকে। আপনারা ওর আশ্রয় হলেও সরকারের ও একটা দায়িত্ব থাকে। আপনি সরকারী অফিসার, জানেন নিশ্চয়ই যে এ বিষয়ে সরকারের একটা পুনর্বাসন কর্মসূচি আছে। তাছাড়া ১৫ বছর বয়সী একটি কিশোরী অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে সশস্ত্র দুই ডাকাতের সঙ্গে ফাইট করে আপনার পরিবারের এতগুলো সদস্যকে রক্ষা করেছে শুধু নয়, তাদের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে তাদেরকে ঘায়েল করে একজনকে আমাদের হাতে তুলে দিয়েছে। ওর এই বিরল কৃতিত্বের জন্য আগামী ১৫ই আগস্ট, আর মাত্র দশ দিন বাকি, ডিএম অফিসে জেলার মধ্যে সাহসিকতার সেরা পুরস্কারটি মুন্নির হাতে তুলে
দেওয়া হবে, মাননীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী মহাশয় নিজে উপস্থিত থেকে এই পুরষ্কার ওর হাতে তুলে দেবেন। ওর জন্য ওর উপযুক্ত একটি সরকারি চাকরির ব্যবস্থা হচ্ছে বলে খবর পেয়েছি। পুরো বিষয়টি আমরা চিঠি করে আপনাদেরকে ও মুন্নিকে জানিয়ে দেব। পোস্টার, মাইকিং করে বিষয়টা প্রচার করা হবে। মিডিয়াকেও এ বিষয়ে কাজে লাগানো হবে। এলাকার বেশি বেশি মানুষকে খবর দিয়ে ঐদিনের অনুষ্ঠানে নিয়ে আসতে হবে কিন্তু। মুন্নি কিন্তু আজ আমাদের সকলের গর্ব।
ভবানি : ধন্যবাদ ওসি সাহেব, অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনারা একটা বিরাট মানবিক কাজ করেছেন।
ওসি সাহেব : আসল কাজটা তো আপনিই করেছেন ভবানিবাবু।