দুই বাংলার মেলবন্ধন ইছামতী
অর্পিতা চক্রবর্তী
কুহেলি বসু, খুব সাধারন এক গৃহবধূ। সারাদিন সংসারের কাজ, স্বামী সন্তান এসব নিয়ে কেটে যায় দিন। কাজের ফাঁকে ফাঁকে একটু আধটু লেখালেখি ওর বেঁচে থাকার রসদ। কখনো জীবন থেকে আবার কখনো কল্পনার রঙে রঙ মিলিয়ে চলতে থাকে কুহুর কলম। একমাত্র মেয়ে মিষ্টু আর স্বামী রূপক এই নিয়ে একটা ছোট তিন কামরার ফ্ল্যাটে বাস ওদের। সুখে দুখে কেটে যাচ্ছে দিন। দেখতে দেখতে মিষ্টুটাও বড়ো হয়ে গেলো।রূপক সেদিন একটু তাড়াতাড়িই অফিস থেকে ফিরেছে। মেয়েটাও ঘুমোচ্ছে। আপাতত ওর তিনদিন ছুটি, স্যার একটু বেড়াতে গেছেন। সেদিন প্রস্তাবটা অবশ্য প্রথম রেখেছিলো রূপক তার বেটার হাফের কাছে। আচ্ছা কুহু এবার আমাদের বিবাহ বার্ষিকীটা যদি কলকাতার বাইরে কোথাও কাটাই তাহলে কেমন হয়? বক্তার কথা শুনে শ্রোতা তো হতবাক। রূপক আবারও জানতে চাইলো, কিগো কিছু বলো? কুহু একটু
আহ্লাদিত হয়েই বললো আমি কি বলবো বলো, বেড়াতে যেতে তো সবসময়ই ভালো লাগে, আর সেটা যদি আবার বিশেষ দিনে হয় তবে তার চেয়ে ভালো আর কি হতে পারে। তুমি বরং এটা নিয়ে তোমার মেয়ের সাথেই প্ল্যানিং করো, আপাতত ওর তিন দিন ছুটি। ব্যাস রূপককে আর পায় কে, সত্যি বলছো, তাহলে আমারও তিনদিন ছুটি। তাহলে চলো তিনজনে মিলে একটা মাস্টার প্ল্যানিং করেই ফেলি। পরিকল্পনা মতো জায়গা নির্বাচনের কাজ শুরু হয়ে গেছে। শেষ পর্যন্ত অনেক খোঁজাখুঁজির পর গুগল মামা আর ইউটিউব কাকার কল্যাণে ঠিক হল ওরা যাবে খুব সুন্দর একটা উইকেন্ড টুরিস্ট ডেস্টিনেশন টাকীতে। তাহলে কুহু রূপকের এই বিবাহবার্ষিকীর সাক্ষী থাকুক স্রোতস্বিনী ইছামতী। আসলে এই বয়সে বিবাহ বার্ষিকী উদযাপনের একটি বিশেষত্ব আছে, আর সেটা হলো একটু বাইরে ঘোরাঘুরি, ভিন্ন স্বদের খাওয়া দাওয়া আর সবচেয়ে বড়ো কথা রান্নাঘর থেকে বিরতি, ব্যাস এইটুকু পেলেই যথেষ্ট।
যেকোন ভ্রমণের প্রথম পদক্ষেপ টিকিট বুকিং, যা এই ভ্রমণে প্রয়োজনীয় ছিল না, কারন লোকাল ট্রেনে জার্নি, তাই ওটা আপাতত বাদ, দ্বিতীয় হোটেল বুকিং, সেটা তো করতেই হবে। গুগল মামার সহায়তায় সেই কাজ চলছে। খুঁজতে খুঁজতে পৌঁছানো গেলো টাকীর বিশ্রাম বাগান বাড়িতে। তাহলে ফাইনাল বিশ্রাম বাগানবাড়ি। এবার আসা যাক শেষ প্রস্তুতি প্যাকিং এ, যা শুরু হয়ে গেছে। তাহলে কাল সকালে দেখা হচ্ছে টাকীতে।
কাক ভোরে ঘুম থেকে উঠে হালকা একটু সাজুগুজু করে বসু পরিবার চলল শিয়ালদহ স্টেশনে, সেখান থেকে আটটার হাসনাবাদ লোকাল, ছুটির দিন বলে বোধহয় ট্রেনটা বেশ ফাঁকা। মোটামুটি ঘন্টা দুই এর যাত্রাপথ, নাম না জানা সবুজের সমারোহ দেখতে দেখতে ওরা চলে আসলো ওদের গন্তব্য স্টেশনে।এরপর পোওওওওও গাড়ি( টোটো) করে সোজা বিশ্রাম বাগান বাড়ি। ভিতরে ঢুকে লাগেজ রেখে রুমে চেক ইন করতে একটু সময় অবশ্য লেগেছিলো, রূপক ব্যাস্ত ঐ সইসাবুদ নিয়ে। এই সুযোগে মা
মেয়ে চেপে বসলো বাগানবাড়ির দোলনাটায়। মনের খুশিতে তখন মুছে গেছে বয়সের বিভেদ। ওদিকে রূপকও হাজির, ফরম্যালিটিও কমপ্লিট, ওরা আধঘণ্টার মধ্যেই রুম দিয়ে দেবে। আজকে ওদের ব্রেকফাস্ট হবে ডিম টোস্ট দিয়ে। রূপক বললো কি কেমন লাগছে বলো? মা মেয়ে দুজনেই একসাথে বলে উঠলো দারুননননন....। কুহু বলল বিবাহ বার্ষিকীর সেরা উপহার পেলাম আজ, থ্যাঙ্ক ইউ ভেরি মাচ।
কুহু এবার দোলনা ছেড়ে উঠে গেলে রূপক এসে ওটা দখল করে নিলো। বাবা আর তার রাজকন্যা আজ পাশাপাশি মনের খুশিতে দুলছে, বেশ লাগছে ওদের দুটিকে দেখতে।হঠাৎ কুহুর গলায় এক কলি গান ভেসে এলো,
আজ মন চেয়েছে আমি হারিয়ে যাবো, হারিয়ে যাবো আমি তোমার সাথে।
ওদিকে ডাক পড়েছে ব্রেকফাস্টের। আসলে পেটের ছুঁচোগুলো তখন সব একসাথে ডাকছে। আপাতত ডিম টোস্ট দিয়েই হোক আত্মার
শান্তি। এবার রুমে গিয়ে একটু ফ্রেশ হয়েই শুরু হবে সাইটসিন। তাহলে এবার তো দেখতেই হচ্ছে বাগানবাড়ির অন্দরসজ্জা। ওমা, এতো বিরাট বড় ঘর, বাথরুম পুরো নিট এ্যান্ড ক্লিন, ফার্নিচার গুলোর মধ্যেও বেশ একটা সাবেকি ছোঁয়া। ইতিমধ্যে নীচে পোওওও( টোটো) গাড়ি এসে হাজির। তাহলে শুরু হোক সাইটসিন। ওদের প্রথম গন্তব্য ছিল মিনি সুন্দরবন বা গোলপাতার জঙ্গল। গাড়ির মালিক বাপির সাথেও পরিচয় হোল। টাকীর গল্প শুনতে শুনতে ওরা পৌঁছে গেলো সোজা মিনি সুন্দরবনে। ওখানে আবার আইডি প্রুফ জমা দিয়ে ঢুকতে হয়। জায়গাটি কিন্তু অপূর্ব।দুপাশে গোল পাতার জঙ্গল আর মাঝখান দিয়ে কংক্রিটের ব্রীজ,আর ঐ যে দূরে দেখা যাচ্ছে ওটা ওয়াচ টাওয়ার। যত দূর চোখ যাচ্ছে শুধু সবুজ, ঘন সবুজ অরণ্য। মিষ্টু বুদ্ধি করে একটা দূরবীন ভাড়া করলো, আর তাতে বাংলাদেশকে আরও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল।ভাবতেও আজ ভারি অবাক লাগছে এই সেই বাংলাদেশ, আমাদের পিতৃপুরুষের জন্ম ভিটা। এপার
বাংলা আর ওপার বাংলা, মাঝখান দিয়ে প্রবাহিত ইছামতী। মন বলছে দেখি, আজ শুধু দুচোখ ভরে দেখি। প্রকৃতির এই রং রূপে আজ মিশে যাক মনের মাধুরী। চারিদিক থেকে ভেসে আসছে ক্যামেরার ক্লিক ক্লিক শব্দ। এভাবেই কেটে গেলো আরো কিছুক্ষন।কিন্তু এবার যে ফিরতে হবে বাগান বাড়িতে, তারপর লাঞ্চ, একটু রেস্ট, এরপর আবার শুরু হবে দ্বিতীয় রাউন্ডের ঘুরু ঘুরু।
দেখতে দেখতে বিকেল চারটে বেজে গেলো, বাপি ঠিক সময়ে এসে পড়েছে। পরবর্তী গন্তব্য টাকীর সাইটসিন। বসু পরিবার আবার সাজুগুজু করে বেড়িয়ে পড়েছে। টাকী কিন্তু বেশ জনপ্রিয় শুটিং স্পট। বির্সজন, গয়নার বাক্স, আটটা আটের বনগাঁ লোকাল এসব বিখ্যাত ছবির শ্যুটিং হয়েছে এখানে। যে যে বাড়িতে শুটিং হয়েছিল সেগুলো আজও সংরক্ষিত। এর পরের গন্তব্য ছিল ঘোষ বাড়ি, যেখানে পা রেখেছিলেন স্বয়ং নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু। বাড়িটি আজও ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দন্ডায়মান। এই দূর্গা দালানে আজও দূর্গা পূজা
হয়। মিষ্টু একটু কৌতূহলবশতই জানতে চাইলো কাকু লাস্ট ইয়ারে এখানে কোন থিমের উপর পূজো হয়েছিলো? বাপি বলল না সোনা, ওসব থিম টিম এখানে হয় না। আসলে আমরা কলকাতাবাসী তো, থিমের পূজো দেখতেই অভ্যস্ত, থিম। সবুজ প্রকৃতি, সহজ সরল মানুষজন নিজেদের আবেগ, ভালোবাসা আর ভক্তির অর্ঘ্য সাজিয়ে দূর্গা পূজো করে। এর পরের গন্তব্য ছিল পূবের রাজবাড়ি, এখানেও দূর্গা পূজো হয়। এই রাজবাড়ির মা দূর্গা আজও বিজয়াদশমীতে সবার আগে নিরঞ্জনের পথে যাত্রা করে, পিছনে বাকি প্রতিমা তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করে এগিয়ে চলে। কুহু চারপাশটা একটু ঘুরে ঘুরে দেখছিল হঠাৎ রূপক বললো কি গো আসবে নাকি, একবার দূর্গা পূজোতে? থিমের কাড়াকাড়ি থেকে বেশ খানিকটা দূরে এই শান্তির ঠিকানায়। কুহু বললো আসবো, অবশ্যই আসবো, ভক্তির নৈবেদ্য দিয়ে সাজানো পূজো দেখার জন্য তো আসতেই হবে।
আবারও দিগন্ত বিস্তৃত ইছামতীকে সাক্ষী রেখে
ওরা একে একে দেখে নিলো জোড়া শিব মন্দির, কূলেশ্বরী কালিবাড়ি, ত্রিশক্তি মন্দির, ভারতীয় সেনাবাহিনীর জেনারেল শঙ্কর রায় চৌধুরীর বাড়ি। যেখানে আজও স্বমহিমায় দূর্গা পূজো হয়, আর উনি নিজে সেই পূজোয় উপস্থিত থাকেন। বাপির কথা শুনতে শুনতেই কুহু হঠাৎ বলে উঠলো, জানিস মিষ্টু শিকড়ের একটা অদ্ভুত টান আছে, আসলে আমরা শহরে একটা ঝাঁ চকচকে জীবন যাপন করি।স্টেটাস আর ডিগনিটির বড়াই করি। কিন্তু দেখ আজও ঐ জেনারেল রায়চৌধুরীর মত মানুষ সেই শিকড়ের টানে চলে আসেন তাঁর নিজের ভিটায়।
একদিকে বিকেলের পড়ন্ত আলো আর পাশ দিয়ে বয়ে চলা ইছামতী দেখতে দেখতে হঠাৎ বাপি বললো চলুন আজ আপনাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবো টাকীর গর্ব, না শুধু টাকী না আমাদের গোটা দেশের গর্ব রাকেশ দাসের সাথে। গাড়ি এসে উপস্থিত হলো টাকী শ্মশানঘাটে, আর সেখানেই বিলীন হয়ে গেছে ভারত মায়ের বীর নিহত সৈনিক। নিজের
দেশকে রক্ষা করতে গিয়ে কারগিল যুদ্ধে চলে গেছে ঐ তরতাজা প্রাণ। এই টাকি ওর পৈতৃক ভিটা, তাই অন্তিম শয্যাও তাঁর এখানেই হয়েছে। ভারত মায়ের বীর সৈনিক রাকেশ দাসকে মনে মনে স্যালুট জানালো বসু পরিবার।
আকাশে তখন গোধূলি লগন। সামনেই টাকি রামকৃষ্ণ মিশন, দূর থেকে ভেসে আসছে
খন্ডন ভব বন্ধন, জগ বন্দন বন্দি তোমায়.......
সূর্যের রক্তিম আভা তখন খেলা করছে ইছামতীর বুকে। দূরে ঐ লাল আকাশ আজকের মতো সূর্যাস্তের ঘোষণা করছে। মিষ্টুর ক্যামেরা চলছে, রূপক আর কুহু চেয়ে আছে দূরে ঐ আকাশ পানে যেখানে বসে আছে এক বিখ্যাত শিল্পী, যাকে দেখা যায় না, সে মনের তুলিতে, আর আকাশের ক্যানভাসে এঁকে যাচ্ছে তাঁর শেষ তুলির টান। ইছামতীর এই সূর্যাস্ত আজ থেকে যাক মনের প্রতিটি রন্ধ্রে। তাহলে এবার যাওয়া যাক টাকীর বিখ্যাত রাজবাড়ি ঘাটে, এখানে একটু চা বিরতি কিন্তু নিতেই হচ্ছে। কি মজা আবার সেলফিজোনও আছে দেখছি তাহলে যেমনই হোক সেলফি মাস্ট,
সুতরাং ক্যামেরা চলছে চলবে।
পরের গন্তব্য মালদ্বীপ রিসোর্ট। সন্ধ্যা হয়ে গেছে, মালদ্বীপ রিসোর্ট তখন সেজে উঠেছে আলোর সাজে। খুব সুন্দর লাগছে দেখতে জায়গাটাকে। আগামী দিন টাকির মানচিত্রে নতুন পালক হয়ে সেজে উঠতে চলেছে এই স্থান।
এদিকে ঘড়িত তখন প্রায় রাত আটটা বাজে, আজকের মতো ভ্রমণ পর্ব এখানেই সমাপ্ত। তাহলে ফেরা যাক রাতের ঠিকানা বাগান বাড়িতে। সারাদিন ঘোরাঘুরিতে সবাই ক্লান্ত, ঠিক রাত সাড়ে নটায় ডাক পড়ল ডাইনিং হল থেকে আর এখানেই পরিচয় হল আরও দুই পরিবারের সাথে। রাতের মেনু রুটি চিকেন আর তার সাথে জমাটি আড্ডা। তিন অচেনা পরিবার খুব অল্প সময়ের মধ্যেই হঠাৎ বন্ধু হয়ে উঠলো। তাহলে কাল নৌকা বিহারে বেড়োচ্ছে এই তিন আগন্তুক পরিবার।
টাকীতে আজ দ্বিতীয় দিন। ফুলকো লুচি, আলুর দম, মিষ্টি সহযোগে ব্রেকফাস্ট সেরে তিন পরিবার এসে পৌঁছাল লঞ্চঘাটে। ভারতের
পতাকা উত্তেলিত নৌকায় ওরা ভেসে চলল ইছামতীর বুকে। ঐ তো দূরে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশকে। কেয়াপাতার জঙ্গলকে পাশে রেখে নৌকা এগিয়ে চলেছে। বেশ অনেকটা গিয়ে নৌকা দাঁড়িয়ে গেলো তিন নদীর সঙ্গমে, ইছামতী কালিন্দী আর বিদ্যাধরী। চারপাশে শুধু জল আর জল, দূরে বিএসএফ এর স্পীড বোট অতন্দ্র প্রহরীর ন্যায় পাহারা দিচ্ছে। তবে এই পর্যন্তই, আর বোট এগোবে না। এপার বাংলা আর ওপার বাংলার মাঝখানে এই জলের সীমানা, এ যেনো এক বড়ই অদ্ভূত বিষয়। যাইহোক কুহুর মন আজ সীমাহীন আনন্দে বিলীন। আকাশের অনন্ত মেঘরাশি আর ইছামতীর কল্লোলিনী স্রোত আজ বুঝি ভেঙে দিচ্ছে মনের সব বাঁধন। কিন্তু সময় যে অতিক্রান্ত, মাঝি ভাই ডাক পেরেছে, তাকে যে এবার নৌকা ফেরাতে হবে।
বাগানবাড়ির ডাইনিং হলে তখন বসেছে মধ্যাহ্নভোজের আসর। ছানার কোপ্তাকারি, বাঁধাকপির ঘন্ট, শুক্তো, চিকেন, রকমারি
সম্ভার যাকে বলে। আর স্বাদ, না সে স্বাদের ভাগ হবে না। আড্ডা, খাওয়া দাওয়া, হাসাহাসি করেই কেটে গেলো এক রাত্রি দেড় দিন। এবার গুটি গুটি পায়ে বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি। ভ্রমণের সূচনা হয়েছিল তিনজনকে দিয়ে কিন্তু বিদায় বেলায় বন্ধু তালিকা বেশ দীর্ঘ। জানিনা এই তিন পরিবার আবার কবে কোথায় মিলিত হবে তবে মনের এলব্যামে ওরা থেকে যাবে চিরটাকাল।
একে অপরকে বিদায় জানিয়ে সবাই রওনা দিয়েছে বাড়ির পথে। বাপির গাড়িটা এই দেড়দিনের চেনা জায়গাটা ছাড়িয়ে এগিয়ে চলেছে টাকী রোড স্টেশনের দিকে। যথা সময়ে ট্রেন উপস্থিত। রূপক বলল ভালো থেকো বাপি, আবার আসলে তোমার সাথে যোগাযোগ করবো। বাপিও অনুরোধ করলো যদি সম্ভব হয় একটিবার এখানে দূর্গাপূজা দেখতে আসবেন। টাকীর প্রতিমা বির্সজন কিন্তু দেখার মতো। ট্রেনের জানলা দিয়ে হাত বাড়িয়ে বাপিকে বিদায় জানাতে গিয়ে কুহু একটু থমকে গেলো। ততক্ষণে বাপি একটা মিষ্টির প্যাকেট ধরিয়ে
দিয়েছে মিষ্টুর হাতে। রূপক আর কুহু তো হতবাক, বাপি রূপকের হাতটা ধরে বললো এটা আমার তরফ থেকে, আবার আসবেন। রূপক ওর হাতটা ধরে বললো আসবো ভাই, নিশ্চই আসবো, তুমি ভালো থেকো, সাবধানে থেকো। ট্রেন ছেড়ে দিলো, আর বাপিকে দেখা যাচ্ছে না মাত্র দেড় দিনে বাপির মতো এমন ভাই পাওয়া সত্যিই সৌভাগ্যের।
শেষ হয়ে গেলো বিবাহ বার্ষিকীর ঝটিকা সফর। দিয়ে গেলো হাজারো স্মৃতি, নতুন করে পাওয়া বন্ধুত্ব, বাপির মতো ভালো মানুষের সান্নিধ্য, বিশ্রাম বাগনবাড়ির আতিথেয়তা, যা সত্যিই অভাবনীয়।
শুরু হলো আবার নতুন প্রতীক্ষা। বসু পরিবারের পরের গন্তব্য আবার যেখানেই হোক না কেনো কুহুর কলম চলছে, হয়তো সে সেজে উঠবে আবার কোন এক নতুন দিগন্ত নিয়ে, তাহলে আজ এখানেই হোক মধুরেন সমাপয়াৎ।